বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গরম কাল এলেই সকলের দুশ্চিন্তার পারদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়। এই হাঁসপাসের কারণ একটাই। প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়তে থাকে পুরো দেশ। সেই গরমে দিনের বেলা তো বটেই, রাতেও আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিতে ঘরে ঘুমানো যেন দায় হয়ে পড়ে।
তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে, গরমেও বাড়িতে থাকা যাবে আরামে? সেই পক্রিয়ার কিছু করতে হবে বাড়ি নির্মাণের সময়, বাকিটা নির্মাণশেষে।
ঘর নির্মাণকালীন পরিকল্পনা…
চারপাশে আলো–বাতাস ঢোকার সুযোগ রাখুন:
বাড়ি নির্মাণের সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অন্য ভবনের সঙ্গে গিজগিজ করে বাড়ি নির্মাণ না করে চারপাশে খোলা রাখতে হবে। তাহলে বাতাস চলাচলের জায়গা থাকবে। ফলে বাড়ি থাকবে
দখিনা বাতাস লাগাও প্রাণে:
দখিনা বাতাসকে বলা হয় স্বস্তির। গীষ্মকালেও সাধারণত দখিনা বাতস বয়ে থাকে। তাই বাড়িটি যথাসম্ভব দখিনমুখী দরজা-জানালা রাখার ব্যবস্থা করুন। উত্তরেও প্রয়োজনমতো জানালা দিন। এতে সহজেই দখিনা বাতাস প্রবেশ করে উত্তর দিয়ে বেরিয়ে ঘরের তাপমাত্রা অনেকটাই শীতল করে দেবে।
প্রয়োজনমতো ভেন্টিলেটর লাগান:
অনেকেই কক্ষগুলোতে কোনো ভেন্টিলেটর লাগান না। ফলে বাতাস চলাচল করতে না পেরে কক্ষগুলো হয়ে পড়ে দমবন্ধ। সেজন্য কক্ষ তৈরির সময় ভেন্টিলেটরের চিন্তাটাও সমানভাবে রাখুন।
নির্মাণ পরবর্তী ঘর ঠাণ্ডা রাখার কিছু টিপস…
১) সাধারণ পাখার বদলে টেবিল ফ্যান ব্যবহার করুন। টেবিল ফ্যানের সামনে এক বাটি বরফ রেখে দিন। এরপর চারপাশে পাখা চালিয়ে নিন। দেখবেন কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘর ঠান্ডা হয়ে যাবে। সেই ঠাণ্ডা স্থায়ী থাকবে বহুক্ষণ।
২) সরাসরি রোদ ঢুকলে ঘর গরমে তেতে-পুড়ে থাকে। তাই রোদের সময় বিশেষ করে দুপুরে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। সেটি সম্ভব না হলে মোটা পর্দা ব্যবহার করুন। যাতে রোদের তাপ সেই পর্দা বিদ্ধ করে ঘরে পৌঁছাতে না পারে।
৩) সন্ধ্যা নামার মুখে আবার তাপমাত্রা কমতে থাকে। সেই সময়ে বন্ধ থাকা দরজা-জানালা খুলে দিন। ঘরে হাওয়া-বাতাসকে খেলতে দিন। দেখবেন ঘর এমনিতেই ঠাণ্ডা হয়ে উঠছে।
৪) পাখা নিয়মিত পরিষ্কার করুন। কেননা একটানা চলতে থাকায় পাখায় অনেক সময় ময়লা জমে যায়। সেজন্য ঠিকমতো বাতাস দেয় না। তাই পাখা অপরিষ্কার হলেই দ্রুত পরিস্কার করে নিন।
৫) বেশিরভাগ বাড়িতে হালকা রঙের পাতলা পর্দা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু রোদ ও তাপকে আটকাতে ভারী পর্দাই সেরা কাজ দেয়। ঘরের সৌন্দর্য বজায় রাখতে আপনি মাদুরের তৈরি পর্দাও ব্যবহার করতে পারেন।
৬) ঘরের মধ্যে গাছপালা রাখুন। ইন্ডোর প্ল্যান্ট ঘরের শোভা যেমন বাড়ায় তেমনি ঘরকেও রাখে ঠান্ডা।
৭) দিনরাত ঘরে বাতি জ্বালিয়ে রাখবেন না। এতে বিদ্যুতের যেমন অপচয় হবে তেমনি ঘরও হয়ে উঠবে ঠনঠনে।
৮) ঘর যেন আসবাবপত্রের গোডাউন হয়ে না উঠে সেদিকে মনোযোগ দিন। বেশি আসাবপত্র রাখবেন না। ঘর যত খোলামেলা ও ফাঁকা হবে, দেখতে সুন্দর লাগে, হাওয়ারাও দ্রুত চলাচল করতে পারবে। ফলে ঘর থাকবে ঠাণ্ডা-শীতল।
টপ ফ্লোর ঠাণ্ডা রাখার উপায়…
গীষ্মকালে দিনভর প্রখর রোদ খেয়ে ছাদ গরম হয়ে ওঠে। রাত হলেই সেই গরম ছাড়তে শুরু করে। ফলে টপ ফ্লোরের নিচে যারা থাকেন তাঁদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। সেজন্য টপ ফ্লোর নিয়েও পৃথক পরিকল্পনা সাজাতে হবে।
ছাদ–বাগান:
ছাদ ঠান্ডা রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় ছাদে বাগান করা। ছাদে গামলা অথবা ঘাস বিছিয়ে গাছ লাগানো যায়। এই ঘাসগুলি সূর্যের আলো থেকে সরাসরি ছাদের মেঝেকে ছায়া দেবে। আবার ফুলের বা গাছের গামলায় রাখা মাটি সূর্যরশ্মি শোষণ করে নেবে। যার ফলে ছাদ সহজে গরম হতে পারবে না। সৌন্দর্য তো আছেই।
সাদা রঙে রাঙান:
ছাদের তাপমাত্রা কম করার অপর একটি পদ্ধতি হল রিফ্লেক্টিভ রুফ সারফেস। ছাদের মেঝেকে রঙ করে দেওয়ায় হলো এই পদ্ধতি। এই রঙগুলি সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত করে তাপ নিরোধকের কাজ করে। এর সাহায্যে ঘর ঠান্ডা রাখা যায়। আবার সস্তায় কাজ হাসিল করতে চাইলে ছাদে চুন লাগান। সেটিও সম্ভব না হলে সিরামিক বা পোর্সিলিন দিয়ে ছাদের মেঝে মুড়িয়ে দিন।
শেড লাগান:
ছাদের মেঝে সাধারণত কংক্রিটের তৈরি। এটি অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাপ ধরে রাখতে পারে। সমস্যা হচ্ছে সেই তাপই নীচের তলার ঘরকে গরম করে দেয়। এই সমস্যার সমাধানের জন্য ছাদের ওপর শেড লাগাতে পারেন। ছাদের পরিসরে দেওয়াল তুলে বা জালজাতীয় শেড লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
হিট রেসিস্টেন্স ফ্লোরিং:
উডেন ডেক টাইলস বা টেরাকোটা টাইলস লাগানো যায় ছাদে। এর ফলে ছাদের নীচের তলার ঘর বেশি গরম হবে না। বেশ কিছু টাইলস রয়েছে, যেগুলো সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত করে দেয় এবং ছাদ ঠান্ডা রাখতে পারে সেগুলো বাছাই করুন।
সোলার প্যানেল:
সোলার প্যানেলের সাহায্যেও ছাদ ঢেকে দেওয়া যেতে পারে। এই সোলার প্যানেলগুলিতে ফোটোভোলটাইক সেল থাকে এবং এগুলি ছাদ গরম হতে দেয় না। পরিবর্তে সূর্যরশ্মি সংগ্রহ করে সৌরশক্তিতে পরিণত হবে।
Quamrul Neaj
A seasoned real estate and automotive expert. As the lead content creator for GariBari, he is passionate about helping users find their perfect home, car, or rental property through insightful articles and practical advice.
Leave a Reply