কীভাবে নির্মান করলে তীব্র গরমে বাড়ি ঠাণ্ডা থাকবে

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের আবহাওয়াতেও মারাত্মক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তীব্র গরমের ফলে বাসাবাড়িগুলো ঠাণ্ডা রাখা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে।

বাড়িঘর নির্মানের সময় সঠিক পরিকল্পনা ও ডিজাইন করে গৃহ নির্মাণ করলে মাত্রাতিরিক্ত গরমেও আপনার ঘর থাকবে প্রাকৃতিকভাবেই ঠাণ্ডা। ফলশ্রুতিতে আপনার জীবনযাত্রার মানই শুধু উন্নত হবে না, সেই সাথে জ্বালানী শক্তির সাশ্রয় ও এর ব্যয় তুলনামূলক অনেক কমে আসবে।  

আসুন জেনে নেই, কীভাবে নির্মাণ করলে তীব্র গরমেও বাড়ি ঠাণ্ডা থাকবে: 

১/ প্রাকৃতিক নির্মল বাতাসের সর্বোচ্চ সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বাতাস প্রবাহিত হয় এমন দিকে মুখ করে বাড়ির ডিজাইন করুন। 

২/ সকালে ও শেষ বিকেলের দিকে সরাসরি সূর্যের তাপ বাড়িতে প্রবেশ করে। যার ফলে প্রচুর তাপ অনুভূত হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দেয়াল রাখুন যেন সূর্যের তাপ সরাসরি গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে। 

৩/ গৃহাভ্যন্তরে বাতাস প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ঘরের মধ্যে যথাসম্ভব ওপেন স্পেস রাখুন। উচ্চ হাইটের ছাদ ঘরে স্বাভাবিক বাতাস প্রবাহের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে। 

৪/ সরাসরি ঘরকে সূর্যের আলো আসা থেকে বাঁচাতে প্রশ্বস্ত বারান্দা রাখুন। 

৫/ সঠিক ইনসুলেশন ম্যাটারিয়ালস ব্যবহার করে ঘরের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্সপার্টদের পরামর্শ নিয়ে ছাদ, দেয়াল ও ফ্লোরে সঠিক নিরোধক ব্যবহার করলে শীতকালে ঘর থাকবে গরম এবং গরমকালে থাকবে স্বস্তিদায়ক ঠাণ্ডা।  

৬/ আপনার বাসার রুফটপে বাড়ির ডিজাইন ও ধরনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রুফিং ম্যাটারিয়ালস যেমন –  টাইলস, রিফ্লেক্টিভ কোটিং ইত্যাদি ব্যবহার করা হলে ছাদে সূর্যের তাপ রিফ্লেক্ট করবে এবং ছাদকে কম উষ্ণ করবে। 

৭/ ছাদে সবুজ পরিবেশ তথা গাছপালা রোপন করে প্রাকৃতিকভাবেই ছাদকে ঠাণ্ডা রাখা যায়। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখা, ছাদের গাছপালা যেন ছাদের ফ্লোর ড্যাম করে না ফেলে। 

৮/ ডিজাইনের সময় ঘরের জানালাগুলো এমন জায়গায় দিন যেখানে খুব সহজেই স্বাভাবিকভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে। ঘরের ভ্যান্টিলেশনের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। 

৯/ ঘরের ফ্লোরগুলোকে ঠাণ্ডা রাখতে ফ্লোর ঢালাইয়ের সময় ন্যাচারাল পাথর ব্যবহার করুন। ফ্লোরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য সিরামিকের টাইলস ব্যবহার করুন। ফ্লোর কার্পেট দ্বারা আচ্ছাদিত করলে এতে ফ্লোরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই গরমকালে ফ্লোরগুলো খোলামেলা রাখুন। 

১০/ বাড়ির দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে পাতাঝড়া গাছ লাগান। এই গাছগুলো ঘরের মধ্যে গরমকালে বাতাস ও শীতকালে মিস্টি রোদ প্রবেশ করতে সাহায্য করে। 

১১/ বাড়ির দেয়ালে গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ রোপন করুন। এই গাছগুলো বাড়ির দেয়ালকে হিট প্রডিউস হওয়া থেকে বাঁচায়; সেই সাথে ছায়া দেয়।  

১২/ বাড়ির দেয়ালে লাইট কালার ব্যবহার করুন। লাইট কালার ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে, সূর্যের সরাসরি তাপকে রিফ্লেক্ট করে। 

১৩/ ঘরের জন্য এনার্জি এফিসিয়েন্ট এপ্লায়েন্স যেমন এনার্জি পাওয়ার সেভিংস বাল্ব, LED লাইট,  সোলার প্যানেল ইত্যাদি ব্যবহার করে ঘরকে খুব সহজেই ঠাণ্ডা রাখতে পারেন সেই সাথে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে পারেন। 

প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তিগুলোর দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখতে পাবেন, সেই সময়ের বাড়িগুলো এমনভাবে তৈরি যেন প্রাকৃতিকভাবেই সেগুলো আরামদায়ক অনুভূতির জন্ম দেয়। কারণ, তারা বাড়ি নির্মাণের সময় ঘরের তাপমাত্রার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতেন। আধুনিক এই সময়ে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে আরো অনেক প্রযুক্তির আবিষ্কার হয়েছে। আমরা সেগুলোর দিকে যত্নবান হলে তীব্র গরমেও আমাদের ঘরগুলোকে ঠাণ্ডা রাখতে পারবো, সেই সাথে আমাদের আর্থিক সাশ্রয় হবে।  

quamrul neaj
Quamrul Neaj

A seasoned real estate and automotive expert. As the lead content creator for GariBari, he is passionate about helping users find their perfect home, car, or rental property through insightful articles and practical advice.

Related Post

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *