ইট! মাত্র দুই অক্ষরের একটি শব্দ। অবকাঠামো নির্মাণের কথা মাথায় আসলে সেই ছোট্ট শব্দটিই কিনা হয়ে ওঠে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ভবন নির্মাণের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল যে এই ইট।
শুধু কি ভবন? যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলেই লাগবে ইট। সেই ৭০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে শুরু হওয়া ইটের ব্যবহার তাই এখনো চলছে সমানতালে। পার্থক্য বলতে তখন মাটির তৈরি ইটগুলো রোদে পুড়িয়ে ব্যবহার করা হতো, আর এখন চুল্লির আগুনে!
বাড়ি নির্মাণ করতে যাবেন মানেই ইট তো লাগবেই! কিন্তু সেই ইট কেমন-সেটি আগে অবশ্যই দেখতে হবে। কথায় আছে না, আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি। তাই দর্শন শেষে বিচার করতে হবে ইটের গুণ কেমন।
অর্থাৎ দুটোই হতে হবে সমানে সমান! কেননা মানুষ যেমন সবাই সমান গুণের নন, তেমনি প্রতিটি ইটও নয় সমান। ইট যে আছে বহুমানের। এবার ইটের সেই মানের দিকে একবার চোখ বুলানো যাক।
ইট মূলত পাঁচ প্রকার:
১. ১ম শ্রেণির ইট
২. ২য় শ্রেণির ইট (পিকেট স্পেসাল)
৩. ৩য় শ্রেণির ইট (পিকেট)
৪. ৪র্থ শ্রেণির ইট (মিঠা)
৫. ৫ম শ্রেণির ইট (ঝামা)
প্রথম শ্রেণির ইট চেনার সহজ উপায়
১. এই ইট যেমন ভালো হবে তেমনি দেখতেও সুন্দর-গাঢ় লাল।
২. পোড়ানোটা হবে একেবারেই নিখুঁত, সবদিকে সমানভাবে।
৩. একটা ইটের সঙ্গে আরেকটি ইটের আঘাত করলে ভাঙবে না, শব্দ হবে টন টন
৪.কোনো চিড় থাকবে না, থাকবে না কোনো ক্ষতচিহ্নও
৫.কোনাগুলো হবে না এবড়োখেবড়ো, হবে সমান
৬. অন্তত চার ফুট ওপর থেকে আরেকটি ইটের ওপর ফেললেও ভাঙবে না।
৭.পানি শোষণ ক্ষমতাও হবে মানানসই, ১৫ শতাংশ।
৮.লোড নেওয়ার ক্ষমতা হবে ১০৫ কেজি।
২য় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ইটগুলো প্রায় একই, মানে একটু এদিক ওদিক। সেই ইটগুলো চিনবেন যেভাবেঃ
১.আকার ও সেপ অসমান
২.কম পোড়ানো
৩.ইটের গায়ে ফাঁটল
৪.অমসৃণ
৫.পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি
৬.দেখলেই বোঝা যাবে নিম্নমানের
৭.সহজেই ভেঙে যাবে।
৮. অতিরিক্ত পোড়ানো
৯.কালো ও ফাঁপা
১০.ইটের শরীরে অনেকগুলো ফোলা
১১. ইটের গায়ে অনেক ক্ষত, ঝাড়লেই কণা ভেঙে ভেঙে পড়ে
নির্মাণে কেন দরকার প্রথম শ্রেণির ইট:
যেহেতু অবকাঠামোটি নির্মাণ করা হবে দীর্ঘদিনের জন্য, তাই ব্যবহার করলে করতে হবে প্রথম শ্রেণির ইটটাই। কেননা প্রথম-শ্রেণির পোড়া মাটির ইটগুলো সর্বোত্তম গুণমান এবং শক্তি প্রদান করে। এই গুলোতে নেই তেমন কোনো ত্রুটি। এটা এগুলোর দাম বেশি, আর নিম্নমানের ইটের দাম অনেকটাই সস্তা।
কিন্তু এটাও তো ঠিক-‘সস্তার তিন অবস্থা।’ এ জন্য বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে প্রথম শ্রেণির ইট বাছাই করা প্রধানতম শর্ত। কেননা নিম্নমানের করবেন তো ধরা খাবেন। পরে দেখা যাবে সেজন্য আরও বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
বাড়ি তৈরিতে কতটি ইট লাগে:
একটি বাড়ি তৈরিতে কতটি ইট লাগে সেটি আসলে নির্ভর করবে নির্মাণের ওপর। তবে আধুনিক হিসেবে বলা হয়-প্রতি বর্গ ফুট গাঁথুনিতে ইট লাগে পাঁচটি। কেউ কেউ হিসেবটা আরেকটু কমিয়ে বলেন ৪ দশমিক ৮ টি।
কেন ইট ব্যবহার করবেন:
ইট একদিকে যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি অন্যদিকে দেখতেও সুন্দর দেখায়। মজবুতও হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একসময়ে ফুটপাত নির্মাণের উপকরণ হিসেবে ইট ব্যবহার করা হতো। তখন দেখা যায় ফুটপাত বেশ সুসজ্জিত যেমন দেখাচ্ছিল, মজবুতও হচ্ছিল।
এরপর থেকে স্থাপনা নির্মাণেও এই দেশে ইটের ব্যবহার শুরু হয়। যথারীতি মেলে ফল। সেই থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি নির্মাণ মানেই প্রধান কাঁচামাল-ইট।
ইট যে কতটা মজবুত তা দেখা যায় বাংলাদেশে বৃট্রিশদের তৈরি করা স্থাপনাগুলোর দিকে তাকালেও। চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি ভবন) জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থাপনাগুলো শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে ইটের ওপরেই, সেখানে লোহার ব্যবহার নেই বললেই চলে।
আর ইট একদিকে যেমন ঘরকে রাখে ঠাণ্ডা তেমনি আদ্র আবহাওয়াও প্রধান শত্রু। মারাত্মক শব্দদূষণ থেকেও রক্ষা করে এই ইট। আর ইট সবখানেই ব্যবহার করা যায়, ভবন কিংবা বাড়ির সীমানাদেয়াল তুলবেন ইট প্রধান কাঁচামাল। ছাদ গড়বেন সেখানেও দরকার হবে ইটের কংকর। রাস্তা নির্মাণ মানেও ইট।
ইটের সবচেয়ে বড় গুণ এটি টেকসই। শুধু তাই নয়। পুনরায় ব্যবহারযোগ্যও ইট। আর ইটের স্থায়ীত্ব কত বছর জানেন অবাক হবেন। ইট ‘বেঁচে থাকে’ ১০০ থেকে দেড়শ বছর।
তাহলে আর কিসের টেনশন! দ্বিধাহীন চিত্তে ব্যবহার করুন ইট। তবে সেই ইট হতে হবে দেখতে যেমন সুন্দর, মানেও দারুণ। আমরা তো বুঝিয়ে দিলাম-প্রথম শ্রেণির ইট কেমন হবে! এখন ইটের সেই কোয়ালিটি চেক করার দায়িত্ব আপনার কাঁধে…
Quamrul Neaj
A seasoned real estate and automotive expert. As the lead content creator for GariBari, he is passionate about helping users find their perfect home, car, or rental property through insightful articles and practical advice.
Leave a Reply