কম খরচে কীভাবে বাড়ি তৈরি করবেন

বাড়ি নির্মাণের খরচ কখনও কখনও আপনার নিজের বাড়ি তৈরির প্ল্যানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সঠিক কম বাজেটের বাড়ি নির্মাণের কৌশল এবং গাইডেন্সের সাহায্যে, আপনি যে খরচে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তার মধ্যেই আপনার নিজের বাড়ি তৈরি করতে পারেন।

খাদ্য, বস্ত্রের চাহিদা মেটার পরেই মানুষের চাহিদা থাকে নিজের একটি বাড়ি। নিজের বাড়ি হোক সেই স্বপ্ন কমবেশি, আমরা সকলেই দেখে থাকি।

কিন্তু দেখা যায় সেই বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে প্রায়শই কিছু ভুল করে থাকি। যার জেরে অহেতুক অনেক টাকা খরচ হয় আমাদের। সেই ভুলগুলি শুধরে নিলে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রেও অনেকটাই সাশ্রয় করা যায়। আগে জেনে নেওয়া যাক কী সেই ভুলগুলি।

অবশ্যই পরামর্শ নিন এদের:

বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে আপনি যদি যত্ন সহকারে কাজ করেন, তবে ঘরের মজবুতির সঙ্গে আপস না করে প্রচুর অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন। এতে আপনার বাড়ির সৌন্দর্যও বাড়বে। তবে এজন্য আপনার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া দরকার। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের মতো পেশাদারদের সহযোগিতা নিলে আপনার বাড়ি শক্তপোক্ত হওয়ার পাশাপাশি সুন্দরও হবে। 

মজবুতির সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়:

অনেকেই নিজের ইচ্ছেমতো বাড়ি নির্মাণে হাত দিয়ে বসেন। তখন দেখা যায় কম খরচ করতে গিয়ে উল্টো পরে দ্বিগুণ খরচই করতে হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রেও সঞ্চয় সম্ভব। সেজন্য বাড়ি তৈরির সময় এর ভিত, প্রাচীর, ছাদ ও মেঝের মতো কাঠামোগত কাজের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরামর্শ নিতে হবে। নির্মাণ সামগ্রীও সেই অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে, যাতে পরবর্তীতে আপনাকে অনুতপ্ত হতে না হয়। বাড়ি তৈরিতে এমন অনেক কাজ রয়েছে, যাতে টাকা বাঁচানো যায়। সেক্ষেত্রে বাড়ির মজবুতির সঙ্গে আপস না করেই এই কাজ করতে পারেন আপনি।

এখানেও বাঁচাতে পারেন খরচ:

একটি বাড়ির নির্মাণ খরচের ২০ শতাংশ হতে পারে এর ফিনিশিং ও ফিটিং খরচ। এর মধ্যে রয়েছে স্যানিটারি ওয়্যার, প্লাম্বিং আইটেম, বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র, দরজা ও জানালা ও পেইন্টিং। এখানেই বাড়ির খরচ কমানোর সুযোগ রয়েছে। সেজন্য অবশ্য কষ্ট করে একটু ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাচাই করে জিনিসপত্র কিনলে একদিকে যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি অন্যদিকে ঠকার সম্ভাবনাও কমবে।

পাইপিংয়ে লোহার বদলে প্ল্যাস্টিকের পাইপ:

পাইপিংয়ের কাজের ক্ষেত্রে আপস একদম করবেন না। কেননা এতে ঘর স্যাঁতসেঁতে হতে পারে। তবে 

লোহার পরিবর্তে প্লাস্টিকের পাইপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন অর্থের সাশ্রয় হবে তেমনি মরচে পড়ে ক্ষয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকবে না। আবার বিদেশি ব্র্যান্ডেড স্যানিটারি ওয়্যার ও বাথরুমের জিনিসপত্রের পরিবর্তে যাচাইবাছাই করে লোকাল ব্র্যান্ডের ভালো মানের আইটেম ব্যবহার করতে পারেন। এসব পণ্য বিদেশি ব্র্যান্ডের তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কম দামে পাওয়া যেতে পারে।

বৈদ্যুতের কাজ:

শুরুতেই বৈদ্যুতিক কাজের নকশা তৈরি করে নিন। এতে এই কাজ যেমন একদিকে সুচারুভাবে করা যাবে তেমনি ছাদে-দেয়ালে অহেতুক কাটাকুটিও করতে হবে না। তারের জন্য তামার তার ব্যবহার করুন। প্রয়োজন অনুযায়ী বৈদ্যুতিক বোর্ড, সুইচ ও সকেট ইনস্টল করুন। অভিনব চাকচিক্য জিনিসের চেয়ে পণ্যের গুণমানের দিকে মনোযোগ দিন। কেননা এরকম সুইচ, সকেট, বোর্ড বা অন্যান্য আইটেম যেমন ব্যয়বহুল তেমনি টিকেও কম। সেজন্য গুণগত মাণের পণ্য কিনলে দাম একটু বেশি গেলেও টেকসই হবে বেশি।

ইন্টেরিয়ারে সাবধানতা:

মার্বেলের পরিবর্তে কংক্রিটের মেঝে তৈরি করুন। মার্বেলের যেমন দাম তেমনি সেগুলো ইনস্টল করার খরচও আলাদা। এর চেহারা সুন্দর রাখতে নিয়মিত পলিশিং প্রয়োজন। যদি ঘরে ফলস সিলিং এর প্রয়োজন না থাকে তবে এটি এড়ানো যেতে পারে। জানালা ও দরজায় কাঠের পরিবর্তে লোহার ফ্রেম ব্যবহার করা যেতে পারে। মডুলারের পরিবর্তে সাধারণ রান্নাঘর তৈরি করা যেতে পারে। ব্র্যান্ডেড পেইন্টের পরিবর্তে ভালো মানের নরমাল পেইন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে যেমন টেকসই হবে তেমনি বাঁচবে খরচও।

অপচয় রোধ:

বাড়ি নির্মানে সঠিকভাবে নজর না দিলে কাজের সঙ্গে যুক্তরা প্রচুর জিনিসপত্র অপচয় করে বসতে পারেন। বিশেষ করে দেখা যায়-কংক্রিট লাগবে পাঁচ বস্তা সিমেন্টের, কিন্তু করে বসেছেন ৭-৮ বস্তার। পরে বাকিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তীক্ষ্ণভাবে নজরদারি রাখলে এসব বিষয় রোধ করা যায়। সিমেন্ট, ইটসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রও অতিরিক্ত কেনা যাবে না। ধাপে ধাপে কিনতে হবে। ফলে অপচয় হবে না।

এছাড়াও খম খরচে বাড়ি নির্মাণে আরও কয়েকটি কৌশল কাজে লাগানো যায়

• প্রি-অ্যাপ্রুভড হোম লোনের জন্য আবেদন করুন। সঙ্গে একটি জরুরি ফান্ড হাতে রাখুন। আর আপনার বাজেটের মধ্যে পুরো বাড়ি নির্মাণে কঠোরভাবে নিয়ম মানুন।

• পুরো বাড়ি নির্মাণকালীন সময়ের জন্য একজন অভিজ্ঞ ঠিকাদার নিয়োগ করুন। এতে আপনার প্রকল্প যেমন ভালোভাবে বাস্তবায়ন হবে তেমনি কমবে খচরও।

• গুণমান যাচাই করে স্থানীয়ভাবে পাওয়া সামগ্রী ব্যবহার করা যেতে পারে, এতে খরচ অনেকটাই কমে যাবে।

•ডিজাইনে সাবলীল রাখুন। অহেতুক হিজিবিজি নকশা না করে প্রাঞ্জলতাকে গুরুত্ব দিন। এতে বাড়ি যেমন চোখের আরাম বাড়াবে তেমনি সাশ্রয়ও হবে। 

সর্বোপরি বাড়ি নির্মাণে আর্থিক পরিকল্পনাটা আগেভাগে নিয়ে নেবেন। এতেই অর্ধেক কাজ এগিয়ে যাবে, কমে যাবে খরচও। হিসেবের মধ্যে সবকিছু করার তখন একটা তাড়া থাকবে।

আর কাজ পুরোটা একেবারে না করে পর্যায়ে পর্যায়ে করা যেতে পারে। কেননা অনেক নির্মাণ সামগ্রীর দাম উঠা-নামা করে। সেজন্য কখন কমতে পারে সেজন্য অপেক্ষা করার সুযোগ হাতে রাখতে পারেন। মোদ্দকথা আপনার একটুখানি কৌশল আর ইচ্ছাশক্তিই বাঁচিয়ে দেবে পকেটের বহু টাকা।

quamrul neaj
Quamrul Neaj

A seasoned real estate and automotive expert. As the lead content creator for GariBari, he is passionate about helping users find their perfect home, car, or rental property through insightful articles and practical advice.

Related Post

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *